মহামারী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মির্জাগঞ্জে ১১ ও দুমকিতে ৪ জনের মৃত্যু.
প্রচন্ড গরম ও কিছু খাবার দাবারের ফলে পটুয়াখালীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
মির্জাগঞ্জ উপজেলায় গত তিনদিনে (১৭ - ১৯ এপ্রিল) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাধবখালী ইউনিয়নের কাঠাঁলতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও সমাদ্দারকাঠী গ্রামের রাকিব খন্দকারের মেয়ে সাহারা সানফুল (১৫), উত্তর মাধবখালী গ্রামের মৃত মহবত আলী হাওলাদারের ছেলে মন্নাফ হাওলাদার (৫০), মাধবখালী গ্রামের মৃত. বন্দে আলী সিকদারের ছেলে মোঃ নুর মোহাম্মদ সিকদার (৮০), উত্তর মাধবখালী গ্রামের দেনছে আলী সিকদারের স্ত্রী কহিনুর বেগম (৫৫), সদর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের মৃত. ফরমান সিকদারের ছেলে আলীম উদ্দিন সিকদার (৭৫), একই গ্রামের মৃত. গনি হাওলাদারের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৭০), মৃত. করিম নেগাবানের মেয়ে ফরিদা বেগম (৫০), ভাজনা কদমতলা গ্রামের মৃত. আজাহার হাওলাদারের ছেলে সোবাহান হাওলাদার (৫৬), পিপড়াখালি গ্রামের ইউনুস সরকারের স্ত্রী কদভানু বেগম (৭০), ঘটকের আন্দুয়া গ্রামের রাখাল চন্দ্র মালির স্ত্রী বিরেন মালী (৫৫) ও মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামের মৃত. একরাম সিকদারের ছেলে আলেক সিকদার (৫০) এর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৯ এপ্রিল) বিকাল ০৩ টা পর্যন্ত স্থানীয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা গেছে।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৯৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে এবং ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭২ জন। এ নিয়ে গত ৭ দিন ওই উপজেলায় ডায়রিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪২ জনে দাড়িয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ২৬১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে ।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা জানান, হাসপাতাল ভর্তি কোন ডায়রিয়ার রোগী এখন পর্যন্ত মারা যায়নি। তবে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কর্মীদের মাধ্যমে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি আরো জানান, বিগত বছরগুলোতে কখনো এতো পরিমান ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে আসে নাই। রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে কিছু স্যালাইন সংগ্রহ করা হয়েছে ও চাহিদা অনুযায়ী সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: শহীদুল হাসান শাহীন স্যালাইন সঙ্কটের
সত্যতা স্বীকার করে জানান, চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। দু-একদিনে সঙ্কট কেটে যাবে বলে আশা করছি।
এদিকে দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া জলিশা গ্রামের আ: হক মুন্সী (৭০) রোববার, এর আগে বৃহস্পতিবার ১১ মাস বয়সী আকিব খান নামে এক শিশু, হাসপাতালের বাইরে পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এক সপ্তাহে ওই উপজেলায় চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে দু’শতাধিক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ্য হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। এখন প্রতিদিনই গড়ে ২৫-৩০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এসব রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: শাকিরুজ্জামান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীদের পাশাপাশি ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বেড সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বেড না থাকায় হাসপাতালের মেঝেতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।